
নির্বাচন কমিশনের সাবেক প্রধান কে এম নূরুল হুদাকে হেনস্তার ঘটনায় ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা জড়িত ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে যে, এই হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শেখ ফরিদ হোসেন। তার সঙ্গে আরও পাঁচজনকে শনাক্ত করা হয়েছে, যাঁরা সবাই স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত।
ঘটনার বিষয়ে আজ মঙ্গলবার উত্তরা পশ্চিম থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। মামলায় শেখ ফরিদ হোসেনসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও কিছু ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এর আগে সোমবার রাতে সেনাবাহিনী হানিফ মিয়া নামের একজনকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। তিনি উত্তরা পশ্চিম থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। পরে তাঁকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মামলার এজাহারে যেসব নেতাকর্মীদের নাম রয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের তুরাগ থানার সভাপতি দুলাল, উত্তরা পশ্চিম থানার আহ্বায়ক সেলিম, উত্তরা পূর্ব থানার যুগ্ম আহ্বায়ক কাইয়ুম এবং দলের একজন কর্মী মুজাম্মেল হোসেন ঢালী। ভিডিও বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মুজাম্মেল হোসেন ঢালী সরাসরি কে এম নূরুল হুদার ওপর জুতা দিয়ে হামলা চালিয়েছেন।
উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান জানান, মামলায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ওপর শারীরিক আক্রমণ, মানহানি, এবং তাঁর ব্যক্তিগত বাসায় জোরপূর্বক প্রবেশের অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ছাড়া অন্যান্য ব্যক্তি অবৈধভাবে কে এম নূরুল হুদার বাসায় প্রবেশ করে ‘মব’ (উচ্ছৃঙ্খল জনতা) তৈরি করেছিলেন। মামলার এজাহারে এসব বিষয় বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত রোববার রাজধানীর উত্তরার নিজ বাসা থেকে কে এম নূরুল হুদাকে জোর করে বের করে এনে তাঁকে জুতার মালা পরিয়ে অপমান করা হয় এবং এরপর তাঁকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, ঘটনার সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল, তবে তাঁদের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
এই ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। একজন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে এমন আচরণকে অনেকেই ‘গণতন্ত্রের জন্য লজ্জাজনক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। বিষয়টি নিয়ে এখনো তদন্ত চলছে এবং পুলিশ বলেছে, জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার কাজ অব্যাহত রয়েছে।