নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান বলেছেন, সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদ অনুসন্ধান করা হবে। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) এনবিআরে ই-রিটার্ন তথ্য সেবা কার্যক্রম উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন তিনি।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা যখন আয়কর রিটার্ন দেন, তখন সেগুলো অডিট করা হয়, তারপর অ্যাসেস করা করা হয়। সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) এ নিয়ে কাজ করে। সক্ষমতা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে করা হয়।
গ্রুপ-কোম্পানির কর ফাঁকির তদন্তের কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে মো. আব্দুর রহমান খান বলেন, এগুলো বৃহৎ করদাতা ইউনিট তদন্ত করছে। সক্ষমতা অনুযায়ী করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে এসব শেষ করা হবে। সব কাজ একসঙ্গে শুরু করলে কোনোটিই শেষ করা যাবে না।
তিনি বলেন, যে করদাতাদের নিয়ে গণমাধ্যমে আলোচনা আছে বা গোয়েন্দাদের মাধ্যমে আমরা তথ্য পাচ্ছি, তদন্তের ক্ষেত্রে আমরা সেগুলোতে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। করপোরেট করদাতাদের ক্ষেত্রে আমরা একই পদ্ধতি অনুসরণ করছি।
এসময় সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয় যে সরকারি কর্মচারী বিশেষ করে আমলা, যারা গত ১৫ থেকে ২০ বছরে অবৈধভাবে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন, এ রকম শত শত লোক রয়েছেন। আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে এনবিআর ও সিআইসি এ নিয়ে ব্যাপকভাবে কাজ করেছিল। এবার কেন এনবিআর হাত গুটিয়ে রয়েছে?
এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা যেতে যাচ্ছি না, আপনারা এ ধরনের কথা বলতে পারেন না। সময় তো সবে মাত্র শুরু। শুরু করতে কিছু সময় লাগে, যা বাইরে থেকে দেখা যায় না। আমরা নিশ্চয়ই বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই, সবাইকে নিয়ে আমরা সে কাজ করতে চাই। এটি করতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। এ জন্য সময় লাগবে। তবে কত সময় লাগবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি এনবিআর চেয়ারম্যান।
রাজস্ব বোর্ডের মাঠ পর্যায় থেকে ট্যাক্স অডিট ফাইল পাঠাতে নিষেধাজ্ঞার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের একটি ইমেজ সংকট রয়েছে, ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ফাইলগুলো ঠিক করি, তা সঠিক হয় না। এ বিষয়ে করদাতাদের কাছে থেকে অভিযোগ আমরা পেয়ে থাকি।
মো. আব্দুর রহমান খান বলেন, এ কারণে আমরা ডিজিটাল পদ্ধতিতে অডিট সিলেকশন করতে চাই, যেন করদাতাদের মনে সন্দেহ তৈরি না হয়। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। যারা কর ফাঁকি দিয়েছেন, তাদের বের করব এবং আইনি ব্যবস্থা নেব। কালো টাকা সাদা করার আইন বাতিল করা হয়েছে। এ আইন বাতিল করার আগে কোনো ব্যক্তি কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নিয়ে থাকলে তা আইনের বলেই নিয়েছেন; সেটা বৈধ। তার কোনো সমস্যা নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত আইনটি বহাল ছিল, ততক্ষণ পর্যন্ত বৈধ।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আর্থিক সক্ষমতা, মূল্যস্ফীতি ও দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বিবেচনা করে করমুক্ত আয় সীমা নির্ধারণ করা হয়, যেন যাদের কম সক্ষমতা, তারা কম কর দিতে পারেন। আর যাদের সক্ষমতা বেশি তারা বেশি দিতে পারেন। সবাই জাতি গঠনে ভূমিকা রাখবেন।
দেশের মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশের মতো করদাতা জানিয়ে তিনি বলেন, বাকি জনগোষ্ঠী করের বাইরে। ভারতে কর দেয় ২২-২৩ শতাংশ মানুষ। করমুক্ত সীমা বাড়ালে আয়কর দেওয়া মানুষ নেটওয়ার্কের বাইরে চলে যাবে।
তিনি আরও বলেন, মামলা জটিলতার কারণে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আটকে আছে। এ মামলা জটিলতা দূর করতে কাজ করা হচ্ছে। হাইকোর্টে ভিন্ন বেঞ্চ হয়েছে, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) কাজ করছে। উভয় পক্ষের জেতার মানসিকতার কারণে মানুষ এডিআরে যেতে চাচ্ছে না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, ৪০ লাখ লোক আয়কর রিটার্ন দেয়। এর মধ্যে মাত্র সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ করদাতা অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দেন। বাসায় বসে আয়কর রিটার্ন দেওয়া যায়। কেন তারা দিচ্ছেন না, সমস্যা কোথায়- তা দেখার জন্যই আমরা আয়কর রিটার্ন কল সেন্টার বা তথ্য সেবা চালু করেছি। রেজিস্ট্রেশন বা আয়কর রিটার্ন বা আয়কর রিটার্ন সেভ করার সময় সমস্যা হলে কল সেন্টারে কল করে সমস্যার সমাধান নেওয়া যাবে।
এসময় ই-রেজিস্ট্রেশনের সমস্যার বিষয়ে তিনি বলেন, এর প্রধান কারণে হলো মোবাইল সিম বায়োমেট্রিক না হওয়া। বায়োমেট্রিক করে মোবাইল সিম সংগ্রহ করা হলে ই-রিটার্ন বা রেজিস্ট্রেশনে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। সমস্যা এড়াতে সিম বায়োমেট্রিক করতে হবে, অথবা বায়োমেট্রিক করতে হবে।