এসএম মুস্তাফিজুর রহমান
আপনি প্র্যাক্টিসিং মুসলিম, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, রোজা রাখেন বলে ভাইবেন না আপনি কারো আক্রমন থেকে নিরাপদ।
আপনি সুন্নি হইলে শিয়াদের কাছে আপনি বাতিল। আপনি শিয়া হইলে সুন্নিদের চোখে রীতিমতো অমুসলিম আর কাদিয়ানী হইলে তো কথাই নাই।
আপনি মাজার বিরোধী হইলে তরিকতপন্থিরা বলবে আপনি অলি আউলিয়ার দুশমন তথা কাফের।
আপনি চার মাজহাবের কোন এক মাজহাব মানেন। আহলে হাদিস গ্রুপের চোখে আপনি কাফের।
মাজহাবিদের চোখে আহলে হাদিস গ্রুপ ভন্ড।
আপনি অলি আউলিয়া ভক্ত,অলির উছিলায় আল্লার সন্ধানে মাজারে মাজারে পড়ে থাকেন । মারেফতের দিক্ষা নিছেন। গেরুয়া লুংগি পরে ঘুরেন। বাকিরা বলবে আপনি গাঞ্জাখোর, মাজার পূজারী!
এক মুফতি ওয়াজ করতেছে নবীজি (স:) নূরের তৈরি তো আরেক প্যান্ডেলে আরেক মুফতি বলতেছে নবীজি (স:) মাটির তৈরি।
এক ছোট গ্রুপ আছে আহলে কোরান। তারা তো কোরানের বাইরে কিছুই মানে না। তাদের দাবী কোরানের ব্যাখ্যা কোরান নিজেই। সেই কোরানের আয়াতের নিজেদের মতো অর্থ আর ব্যাখ্যা করে বুঝাই দিছে আমরা যে হজ্ব কোরবানি করি তা হারাম। আমরা যেই নামাজ পড়ি এইটা নাকি কোরানে বলা নামাজই না।
আরেক গ্রুপ হাদিস মানে না। কারণ, নবীজি (স:) এর মৃত্যুর ২০০ বছর পর হেথায় সেথায় ঘুরে সংগ্রহ করা হাদিসকে তারা হাদিস বলে মনে করে না। অমুক শুনছে তমুকের থেকে, তমুক সমুকের থেকে, সমুক শুনছে জমুকের থেকে…এই ভাবে যাইতে যাইতে পাওয়া গেল যে আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত- নবী করিম (স:) বলেছেন……
এই ফর্মূলায় সংগ্রহ করা হাদিস নিয়া সংশয় তাদের।
কী মুসিবত!!! যাইবেন কই???
সব ছেড়ে ছুড়ে গেলেন তাবলীগে। গিয়ে দেখেন বাশ দিয়া মাথা ফাটাফাটি চলতেছে সাদপন্থী আর জুবায়ের পন্থীদের মধ্যে। আপনি কোন পন্থি বুঝে উঠার আগেই দেখলেন কারা জানি মাইরা আপনারে হোতাই ফালাইছে!
আপনি নামাজে হাত বান্ধেন নাভির উপ্রে তো আরেকজন কয় আপ্নের সিস্টেম ভুল। হাত বানতে হইবো বুকের উপ্রে।
আইসিস নামের এক ক্রাইসিস গ্রুপের চোখে তারা বাদে বাকি সব কাফের।
আপ্নে দাড়ি রাখেন না, ক্লিন শেভড। আপনার পাশে আছে হিজবুত তাওহীদ ও তাদের এমাম সেলিম মিয়া। আপনারে কারাতে স্টাইলে নামাজ পড়া শিখাইবে সে।কিন্তু বাকি সবাই কইবো আপনে ইসলামের দুশমন।
শান্ত সৌম্য সুফিবাদে যাইতে চান!? দেখবেন সেই সূফিদের আওলাদেরা কোটি কোটি টাকা হাদিয়া নিয়া বিশাল ধনী পীর হইয়া পূর্ণ ননীযুক্ত শরীর নিয়া গদিনে আসিন। তাদের চোখে দেওয়ানবাগী আবার ভন্ড।
গান বাজনা হারাম বলে হুংকার দিয়ে বড় এক আলেম ওয়াজ করে চলে গেছেন। সেই ময়দানেই দুই দিন পর ইসলামি জলশা নাম দিয়া বাবা মাইজভান্ডারি বা কেল্লা বাবা বা ল্যাংটা সোলেমানের আশেকানরা বয়াতি ভাড়া করে বিকট শব্দের ঢোল করতাল বাজিয়ে মাইকে সারা রাইত গান গাইতেছে। ভক্ত আশেকানরা অশেষ নেকি হাসিল করতেছে।
আলিয়া মাদ্রাসা থেকে পাশ করা আলেম আর কওমি মাদ্রাসার আলেম আবার এক জিনিস না।
মিজানুর রহমান আজহারি বলতেছে- “বিশ্ব নবী বলেন-…….”
এদিকে আরেক হুজুর ফতোয়া দিচ্ছে- “যারা রাসূল (স:) কে বিশ্বনবী বলবে তারা কাফের!”
আপনি চাঁদপুরে ইদ করে ঢাকায় এসে শুনেন পরেরদিন আবার ইদ!!!
খোলাফায়ে রাশেদিন অর্থাৎ চার খলিফার তিন খলিফাকেই ঘাতকেরা হত্যা করেছিল। হত্যাকারীরা কিন্তু মুসলিম ছিল এবং এইসব হত্যাকান্ডের পক্ষে তাদের যুক্তি ছিল যে অই খলিফাগণ সহিহ মুসলিম ছিলেন না। বরং তারাই (হত্যাকারীরা) আদি ও আসল মুসলিম। এমনকি ইমাম হোসেইন (রা:) কে হত্যার জন্য ততকালীন ৪০০ আলেম ফতোয়া দিয়েছিলেন।
তিন খলিফার হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়া ক্যাচাল করে দুই গ্রুপ সাহাবী পরস্পরের সাথে যুদ্ধ করে একে অপরকে হত্যা করেছিল। প্রত্যেকেই তাদের নিজেদেরই সহিহ মুসলিম দাবি করতেন।
আপনি কোন বিষয়ে সঠিক মাসআলা জানার জন্য গেলেন মুফতি গিয়াসউদ্দিন তাহেরির কাছে। সে আপনাকে কোরান হাদিস মোতাবেক মাসআলা দিয়ে দিল। পরে গেলেন শায়খ আহমদুল্লাহ হুজুরের কাছে। তিনিও কোরান হাদিসের আলোকে সমাধান দিলেন। কিন্তু দেখলেন দুইজনের মাসআলা পুরাই বিপরীত।
কই যাইবেন?
গেলেন আব্বাসী হুজুরের কাছে। হুজুর আবার পিএইচডি করা। তিনি সব শুনে বললেন- “ওরা তো কাফের!”
এত এত বিভ্রান্তিতে পড়ে এক বন্ধুকে (কোরান হাদিস,ধর্ম কর্ম নিয়া সে সব সময় পোস্ট দেয়) জিজ্ঞেস করলাম- “এত এত তরিকা, এত এত পদ্ধতি, একেকজনের হাত বাধা, দাঁড়ানো রুকু সিজদায় পার্থক্য তো ক্যাম্নে নামাজ পড়বো? নবিজী (স:) ক্যাম্নে নামাজ পড়তেন?”
তার জবাব- “আমরা যেই প্রচলিত নামাজ পড়ি নবিজী (স:) এম্নে নামাজই পড়তেন না।”
যেটুকু ভাল ছিলাম এইবার পুরা আউলাইয়া গেলাম।৷
আল্লাহ সবাইকে সিরাতুল মোস্তাকিম নসিব করুন।