দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা বিএনপির সভাপতি চাঁদ আলী খানকে সাময়িকভাবে পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে জেলা বিএনপি। শুক্রবার (২১ জুন) রাতে জেলা বিএনপির দলীয় প্যাডে এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে রাজবাড়ী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক লিয়াকত আলী ও সদস্যসচিব কামরুল আলম স্বাক্ষর করেন। এতে বলা হয়,
“গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে দলীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে শৃঙ্খলাভঙ্গ করায় চাঁদ আলী খানকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাঁর স্থলে সিনিয়র সহসভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমদকে পাংশা উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হলো। এ সিদ্ধান্ত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।”
শনিবার সকালে রাজবাড়ী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক লিয়াকত আলী বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন,
“দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যদি কোনো নেতা গ্রেপ্তার হন বা সাংগঠনিক স্থিতি ব্যাহত হয়, তখন পরবর্তী নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া দলের নিয়ম।”
ঘটনার পটভূমি: উত্তেজনা, হামলা, মামলা ও গ্রেপ্তার
এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে এক উত্তপ্ত পরিস্থিতির সূত্রপাত। গত ২০ জুন বৃহস্পতিবার বিকেলে, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজবাড়ী জেলা কার্যালয়ে গণশুনানিকালে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ওই শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন চাঁদ আলী খানসহ বিএনপির স্থানীয় কয়েকজন নেতা-কর্মী।
অভিযোগ অনুযায়ী, শুনানির একপর্যায়ে অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কাজী রকিবুল হাসান ও অফিস সহকারী সবুজ হোসেনকে মারধর ও লাঞ্ছিত করেন চাঁদ আলী খান ও তার সহযোগীরা। এ ঘটনার জেরে সন্ধ্যায় রাজবাড়ী সদর থানা-পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একটি দল অভিযান চালিয়ে চাঁদ আলী খানসহ ছয়জনকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃতদের নাম:
-
চাঁদ আলী খান
-
রুহুল আমিন (নারায়ণপুর)
-
বাচ্চু বিশ্বাস (নারায়ণপুর)
-
মামুন শিকদার (ভবানীপুর, রাজবাড়ী শহর)
-
ফরিদ হোসেন
-
শিশির করিম
পুলিশ জানায়, তাঁরা সবাই বিএনপির সক্রিয় নেতা-কর্মী।
আইনি ব্যবস্থা ও জামিন
ঘটনার পর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কাজী রকিবুল হাসান বাদী হয়ে “সরকারি কাজে বাধা, হামলা ও লাঞ্ছনা” অভিযোগে রাজবাড়ী সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশের পক্ষ থেকে রাতেই গ্রেপ্তারদের আদালতে হাজির করা হয়। তবে শুক্রবার বিকেলেই তাঁরা জামিনে মুক্তি পান।
প্রেক্ষাপট ও বিশ্লেষণ
চাঁদ আলী খান স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপির অন্যতম পরিচিত মুখ। গণশুনানিতে অংশ নেওয়া ও তার পরবর্তী আচরণ নিয়ে দলে দীর্ঘদিন ধরেই অসন্তোষ চলছিল বলে জেলা বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে। এই ঘটনার মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপির সাংগঠনিক স্থিতি ও দায়িত্বশীলতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।



