নিজস্ব প্রতিবেদক সুমন খান
বিয়ের নামে প্রতারণা ও নির্যাতনের অভিযোগ
উপসচিব মাহবুব আলমের যৌন লালসার শিকার এক নারী।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোঃ মাহবুব আলমের বিরুদ্ধে প্রতারণার বিয়ে দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন, নারী নির্যাতন ও প্রতারণার অভিযোগ করেছেন সুরাইয়া পারভীন দীনা নামের একজন সাবেক কলেজ শিক্ষার্থী নারী।
সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর জমা দেয়া লিখিত আবেদনে অভিযুক্ত উপসচিবের বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেছেন তিনি।
আবেদনে তিনি জানান, আমি বর্তমানে একজন অসহায় নারী। আমার স্বামী আপনার অধীনে প্রশাসনের ২৯তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার বর্তমানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবের একান্ত সচিব এবং ডানহাত। আমার প্রতি আমার স্বামী অনেক অন্যায় অবিচার ও প্রতারণা করছে যা অল্প কথায় উপস্থাপন করছি।
আমি কুমিল্লা উপজেলার দাউদকান্দি উপজেলার একজন স্থায়ী বাসিন্দা। ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়ালেখা করার সময় পারিবারিক সমস্যার কারণে আমি তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুব আলমের নিকট সাহায্য চাইতে যাই। মাহাবুব আলম উপজেলা নির্বাহী অফিসার থাকার সময়ে আমাকে ভালোমতো লেখাপড়া করতে বলেন তার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে বলেন তিনি তার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর দিয়ে আমার সাথে প্রায় সময় যোগাযোগ রাখেন এবং নিয়মিত আর্থিক সহযোগিতা করতে থাকেন। প্রায় তিনি আমাকে কুমিল্লা শহরের বিভিন্ন জায়গা ঘুরতে নিয়ে যেতেন এবং আমার জন্য ভালো কাপড় চোপড় কিনে দিতে থাকেন। প্রতি মাসের দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ রবিবার আমার সাথে দেখা করেন। তিনি পারিবারিকভাবে বিভিন্ন ঝামেলার মধ্যে থাকেন এই কারণে আমার সাথে দেখা করে বিশেষ সময় কাটানোর ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। এক পর্যায়ে আমাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলে তিনি আমাকে প্রতিষ্ঠিত হতে বলেন এবং পড়ালেখা শেষ করে একটা ভালো চাকরি দিবেন বলে আশ্বস্ত করেন। এভাবে প্রায় বছর খানিক অতিবাহিত হয়। ইতিমধ্যে তিনি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে চলে গেলে তার সাথে নিয়মিত দেখা করতে পারিনি এতে তিনি আমাকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একটি বেসরকারি কিন্টার গার্ডেনে শিক্ষক পদে নিয়োগ দেন এবং আমাকে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে দেন। কিন্তু তিনি আমার সাথে বেগমগঞ্জ উপজেলায় দেখা করতেন না। নোয়াখালী জেলার বিভিন্ন রেস্ট হাউসে আমাকে নিয়ে যেতেন এবং দেখা করতেন।
প্রতিমাসের মিটিং শেষ করে তিনি আমার সাথে দেখা করতেন দ্বিতীয় তৃতীয় এবং চতুর্থ রবিবার। বিয়ের আশ্বাস দিয়ে বাধ্যতামূলক তিনি বিকেল বেলা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাকে সেখানে অবস্থান করতে বলেন এভাবে তিনি প্রায়ই আমার সাথে শারীরিকভাবে মেলামেশা করেন এবং তাড়াতাড়ি সেকেন্ড ম্যারেজ (বিয়ে) করবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করেন। কিছুদিনের মধ্যেই হুজুরের মাধ্যমে আমরা বিয়ে করি। বেগমগঞ্জ উপজেলায় থাকাকালীন দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পরে, তখন মাহবুব আমাকে নোয়াখালী শহরে, সার্কিট হাউজের কাছাকাছি একটা দুই রুমের বাসা ভাড়া নিয়ে দেন। তখন একসময় আমি প্রেগন্যান্ট হয়ে পড়ি, তিনি এবর্শন করাতে আমাকে বাধ্য করেন, বেগমগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালের হেড ডাক্তারের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে আমাকে ৪ দিন ভর্তি থাকতে হয়। আমি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়লে মাহবুব আমাকে না জানিয়ে বান্দরবান জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হয়ে বদলি হয়ে যায়। এর কয়েক দিন পর সে আমাকে চট্টগ্রামে বাসা নিতে বলে, না করলে সে আমাকে বান্দরবনের একটি এনজিও তে চাকরি দিবে বলে নিয়ে যায়। আমাকে কিছুদিন একটা বেসরকারী আদিবাসীদের রেস্ট হাউজে রাখে এবং নিয়মিত আমার সাথে স্বামি স্ত্রীর মতো সম্পর্ক চলতে থাকে। আমার বাড়িতে নিয়মিত টাকা পাঠানোর জন্য টাকা দিতো। বান্দরবান থাকার তিন মাসের মধ্যে জানায় তার স্ত্রী শাবরিনা ইসলাম সব জেনে গেছে, ডিসির কাছে অভিযোগ দিয়েছে তাই মাহবুব এর চাকরিতে সমস্যা হচ্ছে। এ জন্য সে আমাকে ঢাকায় অথবা চট্টগ্রামে চলে যেতে বলে। আমি তার চাকরির ভবিষ্যত চিন্তা করে তার কথামত তারই ঠিক করে দেয়া ঢাকার মোহাম্মদপুরের একটি বাসায় উঠি। তারসাথে আমার যোগাযোগ অব্যাহত থাকে। সে আমাকে জানায় কিছুদিনের মধ্যে ঢাকায় বদলি হয়ে আসবে এবং আমাকে নিয়ে সে আলাদা বাসায় থাকবে। এর পর সে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বদলি হয়ে আসে। আমার সাথে যোগাযোগ রক্ষার জন্য এরপর পরিকল্পনা
অধিদপ্তরে পোস্টিং নেয় আমাকে শেওড়াপাড়ার একটি বাসায় রাখে। আমরা খুব ভালো সময় কাটাই। এর মধ্যে সে আরো ভালো দায়িত্ব পায়। সচিবের পিএস নিয়োগ পায় এবং সচিবের সাথে অনেক দূর্নীতি করে, মাঝে মাঝেই ব্রিফকেসে করে টাকা নিয়ে বাসায় আসতো। সচিবের সব গোপন লেনদেন মাহবুবকে দিয়ে করাতো। সচিব নাকি রেগুলার মদ খায় এবং রেডিসন, সোনারগাঁও, অয়েস্টিন হোটেলে নায়িকাদের সাথে সময় কাটায়। আমাকে ছবি ও দেখায়। গত পাচ মাস যাবত মাহবুব আমার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে না। আমি ফোন দিলে কেটে দেয়, সে সচিবের পিএস, ইচ্ছা করলে আমার ক্ষতি করতে পারে, আমাকে বিভিন্ন হুমকি দেয়। তাই আমি কিছুটা ভয় পাই, বিষয়গুলি তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বন্ধুকে জানাই, তারা আমাকে ধৈর্য ধরতে বলেন। কিছুদিন আগে ছাত্র আন্দোলনে দেশ স্বাধীন হলে আমি তার সাথে যোগাযোগ করি, সে আমাকে জানিয়ে দেয় আমাকে সে কাবিন করে বিয়ে করেনি তাই সেটা বিয়ে না। আমার পায়ের তলা থেকে মাড়ি সরে গেলো, আমি নিরুপায় হয়ে এই অভিযোগ দায়ের করছি। আমি জানি এটা নিয়ে থানায় মামলা করলে আমার এবং তার প্রচুর সম্মানহানি হবে। তাছাড়া সে আমার স্বামী। আমি কোনো মিডিয়ার কাছেও বিচার চাইনি। আমাদের বিয়ের এবং দীর্ঘ ৬ বছরের অনেক স্মৃতিময় ছবি এবং ভিডিও রয়েছে। আমার আত্মসম্মান রক্ষা করতে তা আবেদনের সাথে সংযুক্ত করলাম না। মাননীয় সচিব স্যার, আপনি দয়া করে আমার এই আবেদন পেয়ে মাহবুব আলমকে নোটিস করবেন। আমি আমার সকল ডকুমেন্টস হাজির করবো, তার সাথে আমার ছবি, ভিডিও, বিশেষ মুহুর্তের সবকিছুই আমার এবং তার গুগল ড্রাইভে সেভ করা আছে। প্রশাসনের ভাবমূর্তি হেয়পন্ন হবে জেনে আমি কোনো ভিডিও বা ছবি প্রকাশ্যে আনলাম না। শুনানির দিন সব সাথে করে আনবো।
মাহবুব এর বিরুদ্ধে মুল অভিযোগগুলি হলো-
১) আমার সাথে প্রতারণা করে বিয়ে করেছে। আমাকে কামিননামা দেয়নি। এখন অস্বীকার করছে। আমাকে স্ত্রীর মর্যাদা দেয়নি।
২) আমার গর্ভের বাচ্চা নস্ট করেছে এবং আমাকে মানসিকভাবে যন্ত্রনা দিয়ে যাচ্ছে এবং ব্ল্যাকমেইল করেছে।
৩) দাউদকান্দি এবং বেগমগঞ্জ এ অনেকের কাছে টাকা নিয়েছে ড্রেজার দিয়ে বালু কাটাতে, আমি তার স্বাক্ষী। বিভিন্ন লোকের আইডি কার্ড দিয়ে ব্যাংকে একাউন্ট খুলে আমাকে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে কোটি কোটি টাকা লেনদেন করেছে।
৪) ঢাকার মোহাম্মদপুর, পূর্বাচলে প্লট কিনেছে। বনানিতে ২ টি ফ্লাট কিনেছে।
৪) সচিবের কাছে দুর্নীতির মিডিয়া হয়ে কাজ করছে
অভিযুক্ত উপসচিবের স্থায়ী ঠিকানা: মো: মাহবুব আলম, পিতার নাম: আবুল হাসেম, মায়ের নাম: হুশিয়ারা বেগম, গ্রাম: লাকসামপুর, পোস্ট: খাজুরা, উপজেলা: কচুয়া, জেলা: চাঁদপুর।
ভুক্তভোগী জানান, আমি বর্তমানে নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছি তাই মো: মাহবুব আলমের ঠিক করে দেয়া বাসা ছেড়ে দিয়েছি। আমাকে নোটিস করে সহজে যেন পাওয়া যায় এ কারণে আমি একটি বেসরকারি এনজিও-এর ঠিকানা ব্যবহার করছি। প্রয়োজনে আমার মোবাইল নাম্বারে হোয়াটসঅ্যাপে তথ্য দেওয়া যাবে।